প্রচ্ছদ খেলাধুলা বাঙালির মন বড় অদ্ভুত জিততে না পেরেও জিতার আনন্দ নেয়! ম্যাচ শেষে...

বাঙালির মন বড় অদ্ভুত জিততে না পেরেও জিতার আনন্দ নেয়! ম্যাচ শেষে যা বললেন হামজা

খেলাধুলা: “এটা আমাদের জন্য খারাপ দিন ছিল। তবে আমাদের জেতা উচিত ছিল।”—হামজা চৌধুরী, ম্যাচ শেষে। বাঙালির মন বড় অদ্ভুত। ওরা জিততে না পেরেও জিতের আনন্দ নেয়। সাতদিন ধরে বলবে, “ড্র তো হল! ভারতের সাথে ড্র, এটাও কম না!” কিন্তু হামজা তো কেবল বাঙালি নয়। সে শিখেছে বৃটিশ মেন্টালিটির জেদ—যেখানে ড্র মানে পরাজয়েরই ছদ্মবেশ। তার চোখে জল আসে না, জল আসে মাঠের ঘাসে, যখন সে দেখে তার সাথিরা “বাহ! ড্র করেছি!” বলে গলাগলি করে। রাতের বাতাসে মিশে যায় হামজার দীর্ঘশ্বাস।

সে জানে, একদিন এই দেশের ড্রেসিং রুম থেকে হারজিতের হিসাব বদলাবে। মানুষের জীবনের সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডি হলো—সমুদ্র দেখার সামর্থ্য থাকতেও পুকুরে ডুব দেওয়া। হামজা আমাদের সেই সমুদ্রের গন্ধ এনে দিয়েছে। আমরাও হয়তো একদিন শিখবো—জয় মানে শুধু স্কোরবোর্ড নয়, জয় মানে নিজের ভেতরের ১০০ টাকাকে ৫ টাকা বলে বিকিয়ে না দেওয়া। হামজা বাংলাদেশের ড্রেসিংরুমকে জানান দিচ্ছে—”খোদাকে ধন্যবাদ দাও, কিন্তু খোদার দেওয়া ক্ষুধাকে কখনো মেরো না। ক্ষিধে থাকলে তবেই তো স্বপ্নের রান্নাঘরে আগুন জ্বলে।”

উল্লেখ্য, বাংলাদেশের জার্সিতে গতকাল অভিষেক হয়েছে হামজা চৌধুরীর। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলা এই ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার নতুন পরিবেশে প্রথম ম্যাচেই প্রাণবন্ত ছিলেন। যেখানে বল সেখানেই ছুটে গেছেন তিনি। কখনও রক্ষণের দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছেন, আবার কখনও আক্রমণে সহায়তা করেছেন। হামজাতে ভর করেই এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের ম্যাচে ভারতকে রুখে দিয়েছে লাল-সবুজের দল।

হামজার উজ্জ্বল দিনে নিষ্প্রভ ছিলেন ভারতের কিংবদন্তি ফুটবলার সুনীল ছেত্রী। ৪০ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ড বাংলাদেশের বিপক্ষে গোল করাটাকে একপ্রকার অভ্যাসে পরিণত করেছিলেন। তবে তিনি বাংলাদেশের গোলরক্ষক মিতুল মারমাকে তেমন কোনো পরীক্ষায় ফেলতে পারেননি। হামজার কারণে কয়েক দফা বলের লাগাল পাননি, আবার পেলেও ঠিকমতো টাইমিং করতে পারেননি। মাঠ ছেড়ে বেঞ্চে বসে থাকা ছেত্রীর মুখ দেখেই তাই বলে দেওয়া গেছে, কতটা হতাশ তিনি। শুধু সুনীলই নন ভারত ডিফেন্সেও বেশ কয়েকবার ভুল করেছে। গোলকিপারও সেরাটা দিতে পারেননি। যদিও সেসব ভুলের মাশুল আদায় করতে ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশ। শেষ পর্যন্ত গোলশূন্য ড্র হয়েছে ম্যাচটি। ঘরের মাঠে র‌্যাংকিংয়ের অনেক নিচের দলের বিপক্ষে পূর্ণ তিন পয়েন্ট না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ ভারতের কোচ মানোলো মার্কেসও।

ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে স্প্যানিশ এই কোচ বলেন, ‘আমি শুধু হতাশ নই, প্রচণ্ড ক্ষুব্ধও। সৌভাগ্য যে আমরা গোল খাইনি। এক পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছাড়তে পেরেছি। আমার কোচিং জীবনের এটাই সব চেয়ে কঠিন সংবাদ সম্মেলন। আমরা জঘন্য খেলেছি। দ্বিতীয়ার্ধে অবশ্য চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু জেতার জন্য তা যথেষ্ট ছিল না।’ শিলংয়ে জওহরলাল নেহেরু স্টেডিয়ামে খেলা শুরু হওয়ার ১৫ সেকেন্ডের মধ্যেই গোল পেতে পারত বাংলাদেশ। ভারতীয় গোলরক্ষক বিশাল কেইথের ভুলে ফাকা পোস্ট পেয়েছিলেন মজিবুর রহমান জনি। তবে গোল আদায় করতে পারেননি তিনি। সংবাদ সম্মেলনে ম্যাচের গোটা পারফরম্যান্সই ভুলে যেতে চাইলেন ভারতের কোচ, ‘এই বিষয়ে খুব বেশি কথা বলতে চাই না।’ এএফসি এশিয়ান কাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বের তৃতীয় রাউন্ডে বাংলাদেশের গ্রুপে ভারত ছাড়াও রয়েছে হংকং ও সিঙ্গাপুর। গতকাল ‘সি’ গ্রুপের আরেক ম্যাচে হংকং ও সিঙ্গাপুরের ম্যাচটিও গোলশূন্য ড্র হয়েছে। আগামী ১০ জুন ঘরের মাঠে সিঙ্গাপুরকে আতিথ্য দেবে লাল-সবুজের দল। বাংলাদেশ ও ভারত পরের পর্বে মুখোমুখি হবে ১৮ নভেম্বর।