অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ফোনালাপ করেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনার ফলকার তার্ক। এ সময় তিনি বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে একাত্মতা এবং এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থনের আশ্বাস দেন। অন্তর্ভুক্তিমূলক, মানবাধিকার-কেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি নিশ্চিত করতে পারলে এই পরিবর্তন এবং সংস্কার সফল হবে, এমন প্রত্যাশা জানিয়েছেন তিনি।
এর আগে, ৫ আগস্ট বাংলাদেশে মর্মান্তিক সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানান মানবাধিকার কমিশনার ফলকার তার্ক। সেই সঙ্গে সিরাজগঞ্জে ১৩ পুলিশসহ রোববারের প্রাণহানির ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি।
জেনেভা থেকে দেয়া বিবৃতিতে বলা হয়, ঢাকায় ৪ আগস্ট যে গণমিছিলের পরিকল্পনা করা হয় এবং ক্ষমতাসীন দলের যুব শাখা বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে ডাক দেয়, তাতে ফলকার তার্ক গভীরভাবে উদ্বিগ্ন যে, আরও প্রাণহানি এবং ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ হবে। তাই তিনি রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং নিরাপত্তা বাহিনীকে তাদের জীবনের অধিকার এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষায় নিজ দায়িত্ব পালনের জন্য জরুরিভাবে আবেদন জানান।
ছাত্র-জনতার গণ আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের যাত্রা শুরু হয়। সেদিন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস এবং ১৩ জন উপদেষ্টা রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে শপথ নেন। এরপর থেকে সবার মুখে প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে এই অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ কতদিন হবে।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার কত দিন ক্ষমতায় থাকবে- এ প্রশ্ন এবার উঠেছে জাতিসংঘের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে।
জাতিসংঘ মহাসচিবের উপমুখপাত্র ফারহান হক ১২ আগস্ট ব্রিফিংয়ে বলেন, জাতিসংঘ আশা করে, গণতান্ত্রিক শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠায় দ্রুত একটি সময়সীমা জানানো হবে।
ব্রিফিংয়ে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, কার্যকর অর্থনীতি, গণতন্ত্র, আইনের শাসন এবং স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক সরকার গড়ে তুলতে কত দিন বহাল থাকতে পারে, সে বিষয়ে জাতিসংঘের কোনো অনুমান আছে কি?
জবাবে মহাসচিবের উপমুখপাত্র বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছি। আশা করছি, সরকার গঠনের জন্য একটি উন্মুক্ত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে। গণতান্ত্রিক শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠায় দ্রুত একটি সময়সীমা জানানো হবে।’
আরেক প্রশ্নে জানতে চাওয়া হয়, ছাত্র আন্দোলনের সময় তিনজন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পরও অনেক গণমাধ্যমের দপ্তর ও সাংবাদিকদের ওপর হামলা হয়েছে। জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কক্ষেও লুটপাট করা হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে জাতিসংঘের প্রতিক্রিয়া কী?
ফারহান হক বলেন, ‘হ্যাঁ, যেকোনো জায়গায় যেকোনো কারণেই হোক না কেন, আমরা সাংবাদিকদের ওপর সব ধরনের হামলার বিরুদ্ধে। বাংলাদেশে যেসব হামলার খবর প্রকাশিত হয়েছে, তাতে আমরা শঙ্কিত।