জাতীয়: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে ভারতে চলে যান বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর থেকে সেখানেই রয়েছেন তিনি। দেশে আন্দোলনকারীদের ওপর দমনপীড়ন ও হত্যার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা হয়েছে। সেসব মামলার বিচারের স্বার্থে ভারত সরকারের কাছে শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠানোর অনুরোধ জানানো হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মোহাম্মদ তৌহিদ হোসেন।
গত ১৫ আগস্ট তিনি বলেন, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অনেক মামলা হচ্ছে। স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয় যদি সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে আমরা ভারতকে অনুরোধ করবো শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে। এটি ভারত সরকারের জন্য বিব্রতকর হবে। ভারত এটি জানে এবং আমি আশা করি তারা এ বিষয়ে খেয়াল রাখবে।
বাংলাদেশ সত্যিই ভারত সরকারের কাছে শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠানোর অনুরোধ জানালে কী করবে নয়াদিল্লি? তারা কি আদৌ সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে ফেরত পাঠাবে? এ বিষয়ে কী বলা আছে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যকার প্রত্যর্পণ চুক্তিতে?
প্রত্যর্পণ চুক্তি
২০১৩ সালে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে একটি প্রত্যর্পণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তি দেশ দুটিকে প্রয়োজন অনুসারে দোষী সাব্যস্ত বা বিচারাধীন আসামি বিনিময় করতে অনুমতি দেয়।
২০১৬ সালে প্রত্যর্পণ চুক্তিতে একটি সংশোধনী যুক্ত করা হয়। এতে এক বছরের বেশি দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের বিনিময়ের সুযোগ দেওয়া হয়। তবে রাজনৈতিক বন্দি এবং আশ্রয়প্রার্থীদের ক্ষেত্রে এই নীতি প্রযোজ্য হবে না।
শেখ হাসিনার জন্য যা প্রযোজ্য
ভারতে প্রত্যর্পণ বিষয়ক কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ হলো পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। শেখ হাসিনাকে ফেরত আনার জন্য বাংলাদেশ সরকারকে ভারতের এ মন্ত্রণালয়ের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ জানাতে হবে।
বাংলাদেশ অনুরোধ করলে শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠানো হবে কি না, সে বিষয়ে গত ১৬ আগস্ট ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল জানান, এটি একটি ‘অনুমানমূলক প্রশ্ন’। তিনি এ ধরনের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার পক্ষপাতি নন। তার মতে, পরিস্থিতি এখনো পরিবর্তন হচ্ছে।
এ বিষয়ে বিএনপি নেতা আব্দুল মঈন খান বলেন, শেখ হাসিনার ক্ষেত্রে হয়তো প্রত্যর্পণ চুক্তিটি কাজে দেবে না। কারণ, চুক্তিতে রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের ফেরত দেওয়ার নিয়ম নেই। শেখ হাসিনাকে কীভাবে এবং কীসের ভিত্তিতে ঠাঁই দেওয়া হয়েছে, সেটি এখনো স্পষ্ট করেনি ভারত সরকার। শেখ হাসিনা আপাতত ভারতেই থাকবেন। এটি এখন ভারতীয় কর্তৃপক্ষ, নীতিনির্ধারক, রাজনীতিবিদ এবং তাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওপর নির্ভর করছে।
ভারতের জিন্দাল স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সের অধ্যাপক শ্রীরাধা দত্তও উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ শেখ হাসিনার ওপর যেসব অভিযোগ চাপিয়েছে, তার ভিত্তিতে ঢাকার অনুরোধ বিবেচনা করা নির্ভর করছে নয়াদিল্লির ওপর।
যা করবে ভারত
ভারতের সঙ্গে শেখ হাসিনার সম্পর্ক বহু পুরোনো ও গভীর। ১৯৭৫ সালে বাবা-মাসহ পুরো পরিবার নিহত হওয়ার পর তিনি প্রতিবেশী দেশে ঠাঁই নিয়েছিলেন। তখন তাকে রাজনৈতিক আশ্রয় দিয়েছিল নয়াদিল্লি। জার্মানি থেকে ফেরার পর পরই শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। সাম্প্রতিক বছরগুলোতেও শেখ হাসিনা ভারত এবং নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন।
ভারতীয় বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারতের পুরোনো সম্পর্ক থাকলেও আপাতত এখানে শেখ হাসিনার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। ভারতকে মনে রাখতে হবে- এ অঞ্চলে নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে বাংলাদেশের বর্তমান প্রশাসনের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা দরকার। এছাড়া এটি বাংলাদেশে শক্তিশালী ভারতবিরোধী মনোভাবও জাগিয়ে তুলতে পারে। এ অবস্থায় ভারতকে পুরোনো বন্ধু ও নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে সতর্কতার সঙ্গে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।