জাতীয়: জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আমরা দুটি রোডম্যাপের কথা বলেছি। প্রথম রোডম্যাপটি হবে সংস্কারের। কী কী বিষয়ে সংস্কারের কাজ ওনারা করবেন। আর দ্বিতীয়টি হবে সংস্কারের সময়সীমা নিয়ে।’
বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াত আয়োজিত এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
শফিকুর রহমান বলেন, ‘একটা রোডম্যাপ যদি সফল হয়, তাহলে দ্বিতীয় রোডম্যাপটাও সফল হবে। প্রথমটা যদি সফল না হয়, দ্বিতীয়টার প্রয়োজনই নেই। ওটা দিয়ে কিছুই হবে না। আর প্রথমটা ঠিক করার জন্য অবশ্যই এ ব্যাপারে অংশীজন যারা আছেন, রাজনৈতিক অংশীজন যারা আছেন, সিভিল সোসাইটি, অন্যান্য যারা আছেন, তাদের সঙ্গে ঐকমত্যে আসতে হবে যে এই এই বিষয়ে সংস্কার হবে এবং এই টাইমলাইনে সংস্কার হবে।’
তিনি বলেন, ‘এ কাজগুলো অন্তর্বর্তী সরকার যদি করে, তাহলে তাদের নাম সোনার অক্ষরে লেখা থাকবে; কিন্তু এখান থেকে যদি চুল পরিমাণ বিচ্যুতি তাদের ঘটে, তাহলে জাতির সর্বনাশ তাদের হাত দিয়েই হবে। আমরা এ আশঙ্কা থেকে বাঁচতে চাই এবং আশাবাদী হয়ে থাকতে চাই। আমরা আহ্বান জানাব, অনতিবিলম্বে তারা সংস্কারের বিষয়টি ডায়ালগ ওপেন করে এর একটি উপসংহারে উপনীত হবেন এবং তারা সেভাবে এগোবেন।’
জামায়াতে ইসলামীর আমির বলেন, ‘যদি এই রোডম্যাপ ধরে সংস্কার এগোয়, আমরা বিশ্বাস করি মাসের পর মাস খুব বেশি প্রয়োজন হবে না। একটি সুনির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এটি সম্ভব। এটা যখন একটি পূর্ণতার পর্যায়ে পৌঁছে যাবে, সঙ্গে সঙ্গে নির্বাচনের রোডম্যাপ দিয়ে দিতে হবে। আর দেরি করা যাবে না। কারণ, নির্বাচনের দিকে যাওয়া মানে গণতন্ত্রের দিকে ফিরে আসা। দেশে তো গণতন্ত্রকে জবাই করা হয়েছে। একটি টার্ম চালু করা হয়েছিল—উন্নয়নের গণতন্ত্র। দুনিয়ার কোথাও এটা শুনিনি। গণতন্ত্র গণতন্ত্রই, উন্নয়ন রাষ্ট্রের দায়িত্ব। এটা কোনো দয়া নয়।’
শফিকুর রহমান বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে মানুষের অনেক প্রত্যাশা। কিন্তু সব প্রত্যাশা যদি একটি অনির্বাচিত অন্তর্বর্তী সরকারই পূরণ করে দেয়, তাহলে নির্বাচিত সরকারের দরকারটা কি; এবং তারা কি পারবে? এটা তাদের জবও না। এ জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্য থেকে দাবি উঠেছে যে নির্বাচনের রোডম্যাপ দিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘ছাত্র-জনতার অর্জিত বিপ্লবের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ রাজনৈতিকভাবে ইন্তেকাল করেছে। শেখ হাসিনা গত ১৫ বছরে শুধু দেশকে নয়, তার দলকেও ধ্বংস করে দিয়েছে। শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার দল আওয়ামী লীগের সব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। দল পরিচালনার মতো কিংবা দলের হাল ধরার মতো একজন লোকও আওয়ামী লীগে নেই। কারণ, আওয়ামী লীগের গণতন্ত্রের চর্চা নেই। তারা ব্যক্তি বা পরিবারের মধ্যে রাজনীতি সীমাবদ্ধ রেখেছে।’
জামায়াতের আমির বলেন, ‘কেবলমাত্র বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর মধ্যেই গণতন্ত্রের চর্চা আছে। জামায়াতে ইসলামী গণতন্ত্র বোঝে এবং গণতন্ত্র বিশ্বাস করে। সে জন্যই জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্ব অন্য দলগুলোর মতো ব্যক্তি বা পরিবারের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়।’
তিনি বলেন, ‘দেশের জনগণ যদি জামায়াতে ইসলামীর ওপর বিশ্বাস ও আস্থা রেখে জামায়াতের হাতে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব প্রদান করে, তবে দেশ থেকে পাচার হওয়া সব সম্পদ দেশে ফিরিয়ে আনা হবে। বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বাংলাদেশ বের হয়ে আসবে।’
মহানগর দক্ষিণের আমির মো. নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম মাসুদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান, মুয়াযযম হোসেন, এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মতিউর রহমান আকন্দ, বাংলাদেশ ল ইয়ার্স কাউন্সিলের সভাপতি জসিম উদ্দিন সরকার বিশেষ অতিথি ছিলেন। এ ছাড়া আইনজীবী হেলাল উদ্দিন, এস এম কামাল উদ্দিন, ইউসুফ আলী, আবদুর রাজ্জাক, সাইফুর রহমান, আবু বক্কর ছিদ্দিক বক্তব্য দেন।
সূত্র : আরটিভি