উপমহাদেশে খেলতে এসে দক্ষিণ আফ্রিকা আর নিউজিল্যান্ড যেন তিন সপ্তাহ আগের সব হিসেব-নিকেশই পাল্টে দিয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকা দুই টেস্টেই বাংলাদেশকে বড় হার উপহার দিয়েছে, এর চেয়েও বেশি অবিশ্বাস্য সম্ভবত নিউজিল্যান্ড যা করেছে সেটি – ভারতকে ভারতের মাটিতে শুধু হারায়ইনি, ভারতের মাটিতে তিন টেস্টের সিরিজে এই প্রথম ভারতকে হোয়াইটওয়াশ করার রেকর্ডও গড়েছে।
‘সেনা’ দেশগুলোকে (দক্ষিণ আফ্রিকা, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া) টেক্কা দিতে ভারত তো সব সময়ই ঘরের মাঠে স্পিনিং উইকেট বানিয়ে রাখে। এবার নিউজিল্যান্ডের জন্য সে ‘গর্ত’ খুঁড়তে গিয়ে নিজেরাই গর্তে পড়েছে। এতে সিরিজে তো হোয়াইটওয়াশ হয়েছেই, এখন টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালেও জায়গা না পাওয়ার শঙ্কায় ভারত। সিরিজের ‘আম’ তো গেছে, ফাইনালের ‘ছালা’ও কি যাচ্ছে?
এদিকে দক্ষিণ আফ্রিকার জয়, ওদিকে নিউজিল্যান্ডের কাছে নিজেদের হার মিলিয়ে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ওঠার স্বপ্নেই বড় ধাক্কা খেয়েছে ভারত। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের এই চক্রে আর একটা সিরিজই বাকি আছে রোহিত-কোহলিদের, সেটি অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে। পাঁচ টেস্টের সেই সিরিজে হেরে গেলে তো বটেই, এমনকি বড় ব্যবধানে না জিতলেও ভারতের টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ওঠা অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।
ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা – পয়েন্ট তালিকায় প্রথম এই পাঁচ দলই তো (এই পাঁচ দলেরই পয়েন্ট পাওয়ার হার ৫০ শতাংশের ওপরে) এখন যা ফাইনালের দৌড়ে আছে, এই পাঁচ দলের বাকি থাকা সিরিজ আর সম্ভাবনা দেখলেই বোঝা যাবে, নিউজিল্যান্ডের কাছে হোয়াইটওয়াশ হয়ে ভারত কতটা কঠিন চ্যালেঞ্জের সামনে পড়েছে। তার আগে পয়েন্ট তালিকায় চোখ বোলানো যাক।
অস্ট্রেলিয়া (১২ টেস্টে ৯০ পয়েন্ট) শীর্ষে আছে, তাদের পয়েন্ট প্রাপ্তির হার ৬২.৫%। বাংলাদেশের সঙ্গে সিরিজে দাপুটে জয়ের পর শীর্ষে জাঁকিয়ে বসা ভারত (১৪ ম্যাচে ৯৮ পয়েন্ট) এই সিরিজে হেরে দুই নম্বরে নেমে গেছে, তাদের পয়েন্ট প্রাপ্তির হার দাঁড়িয়েছে ৫৮.৩%। তিনে শ্রীলঙ্কা (৯ ম্যাচে ৬০ পয়েন্ট), তাদের পার্সেন্টেজ ৫৫.৬। নিউজিল্যান্ড ৫৪.৬% পয়েন্টের হার নিয়ে চার নম্বরে উঠে গেছে, তারা ১১ ম্যাচে পয়েন্ট পেয়েছে ৭২। পাঁচে দক্ষিণ আফ্রিকা (৮ ম্যাচে ৫২ পয়েন্ট), তাদের পয়েন্ট প্রাপ্তির হার ৫৪.২%।
অন্য কারও দিকে তাকাতে না হলে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ভারতকে ৫-০ বা ৪-০ ব্যবধানে জিততে হবে। সেটা হলে তাদের পয়েন্ট প্রাপ্তির হার দাঁড়াবে ৬৫%-এর ওপর, আর সেক্ষেত্রে শুধু দক্ষিণ আফ্রিকা অথবা শ্রীলঙ্কারই সুযোগ থাকবে ভারতকে টপকে যাওয়ার। অর্থাৎ, ভারতের ফাইনালের দুই দলের একটি হওয়া নিশ্চিত হয়ে যাবে।
ঝামেলা হলো, অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে গিয়ে ৪-০ বা ৫-০ ব্যবধানে জেতা তো আর বললেই হয়ে যায় না! ভারত যদি ৪-১ ব্যবধানেও জেতে, সেক্ষেত্রে তাদের পয়েন্টের হার দাঁড়াবে ৬৪.১%, যা দক্ষিণ আফ্রিকা অথবা শ্রীলঙ্কা বা নিউজিল্যান্ডের পক্ষে পেরিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে, যদি এই দলগুলো নিজেদের বাকি থাকা সব ম্যাচ জেতে (দক্ষিণ আফ্রিকার একটি সিরিজ শ্রীলঙ্কারই বিপক্ষে)।
বাংলাদেশকে গুঁড়িয়ে হঠাৎ যেন দাপুটে অবস্থানে দক্ষিণ আফ্রিকা। তাদের বাকি দুই সিরিজই ঘরের মাঠে, এটা একটা বড় সুবিধা প্রোটিয়াদের। এই চার ম্যাচই জিতলে দক্ষিণ আফ্রিকার পয়েন্টের হার দাঁড়াবে ৬৯.৪%, সে ক্ষেত্রে ফাইনালে জায়গা নিশ্চিত হয়ে যাবে প্রোটিয়াদের। কারণ ওই জয়ের হার ছোঁয়া শুধু অস্ট্রেলিয়ার পক্ষেই সম্ভব। তবে চার টেস্টের তিনটি জিতলে (অন্যটি হেরে গেলে) তাদের পয়েন্টের হার দাঁড়াবে ৬১%, তবে সে ক্ষেত্রে অন্য দলগুলোর ম্যাচের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে দক্ষিণ আফ্রিকাকে।
ভারতকে হোয়াইটওয়াশের তেতো রেকর্ড উপহার দিয়েও অবশ্য নিউজিল্যান্ড একেবারে নিশ্চিত হতে পারছে না। ইংল্যান্ডকে তারা ৩-০ ব্যবধানে হারালেও ফাইনালে তাদের জায়গা নিশ্চিত নয়। কারণ সে ক্ষেত্রে তাদের পয়েন্টের হার হবে ৬৪.৩%, যা ভারত বা অস্ট্রেলিয়া এবং দক্ষিণ আফ্রিকা বা শ্রীলঙ্কার পক্ষে পেরিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। ভারত-অস্ট্রেলিয়া আর দক্ষিণ আফ্রিকা-শ্রীলঙ্কা সিরিজের কোনো একটি সমতায় শেষ হলেই কেবল ইংল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করে নিশ্চিন্ত থাকতে পারবে নিউজিল্যান্ড।
গত মার্চে সর্বশেষ টেস্ট খেলা অস্ট্রেলিয়া অন্যদের উত্থান-পতনই দেখেছে এতদিন। এর মধ্যেই ভারত নিউজিল্যান্ডের কাছে হোয়াইটওয়াশ হওয়ায় তারা উঠে গেছে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে। অস্ট্রেলিয়ার বড় সুবিধা –তাদের বাকি থাকা দুই সিরিজ এই মুহূর্তে পয়েন্ট তালিকায় তাদের ঠিক নিচে থাকা দুই দলের সঙ্গে। অর্থাৎ, এই সিরিজগুলোর পয়েন্টের প্রভাব আসলে দ্বিমুখী হবে।
এই সাত টেস্টের পাঁচটি জিতলেই তাদের ফাইনালে ওঠা প্রায় নিশ্চিত হয়ে যাবে। তবে দুটি সিরিজেই তাদের ম্যাচ জিততে হবে। ভারতের বিপক্ষে ৪-০ ব্যবধানে জিতলেও শ্রীলঙ্কার কাছে যদি ২-০ ব্যবধানে হেরে যায় অস্ট্রেলিয়া, সেক্ষেত্রে তাদের পয়েন্টের হার হবে ৬২.৩%। তেমন হলে নিউজিল্যান্ড (ইংল্যান্ডকে ৩-০ ব্যবধানে হারালে তাদের পয়েন্টের হার হবে ৬৪.৩%) ও শ্রীলঙ্কার (তারা দক্ষিণ আফ্রিকায়ও ২-০ ব্যবধানে জিতলে তাদের পয়েন্টের হার হবে ৬৯.২%) পক্ষে অস্ট্রেলিয়াকে টপকে যাওয়ার সুযোগ থাকবে।
ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টানা তিন সিরিজে জিতে দারুণ অবস্থানে চলে গেছে শ্রীলঙ্কা। যদি বাকি থাকা চার টেস্টেও তারা জেতে, সেক্ষেত্রে তাদের পয়েন্টের হার দাঁড়াবে ৬৯.২%, যা একমাত্র ভারতের পক্ষে টপকানো সম্ভব যদি ভারত অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ৫-০ ব্যবধানে জেতে। চার টেস্টের তিনটিতে জিতলে শ্রীলঙ্কার জয়ের হার দাঁড়াবে ৬১%, সে ক্ষেত্রে অন্য দলগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে তাদের।