
ঘরোয়া ক্রিকেটে ধারাবাহিক পারফর্ম করেও জাতীয় দলে ব্রাত্য ছিলেন। কিন্তু এনামুল হক বিজয় দমে যাননি। এনসিএল, বিপিএলের পর ডিপিএল- যেখানেই খেলেছেন, ডানহাতি এই ব্যাটার ব্যাট হাতে রানের ফোয়ারা ছুটিয়ে গেছেন। দুরন্ত পথচলায় এক বছরের বেশি সময় পর জাতীয় দলের দরজা খুলেছে বিজয়ের জন্য। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টের স্কোয়াডে জাকির হাসানের বদলে সুযোগ পেয়েছেন ৩২ বছর বয়সী এই টপ অর্ডার ব্যাটার।
গত বছরের মার্চে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের পর বাদ পড়েছিলেন এনামুল। সবশেষ টেস্ট দলে ছিলেন ২০২২ সালের জুনে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে। এরপর লাল-সবুজের জার্সিতে না দেখা গেলেও ঘরোয়া ক্রিকেটের তিন সংস্করণেই বিজয় ছিলেন দুর্দান্ত ছন্দে। কদিন আগেই স্বীকৃত ক্রিকেটে পঞ্চাশতম সেঞ্চুরির মাইলফলক স্পর্শ করেছেন তিনি। এর রেশ না কাটতেই পরের ম্যাচে আবার পান তিন অঙ্কের স্বাদ। ডিপিএলের চলতি আসরে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকও এই ডানহাতি ব্যাটার।
সিলেটে সফরকারী জিম্বাবুয়ের কাছে প্রথম টেস্টে ৩ উইকেটে হেরে গেছে বাংলাদেশ দল। যেখানে ব্যাট হাতে বড় ইনিংস খেলতে ব্যর্থ ছিলেন টপ অর্ডার ব্যাটাররা। তাই সিরিজে ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষ্যে দ্বিতীয় টেস্টের স্কোয়াডে ফেরানো হয়েছে বিজয়কে। তাকে ফেরানোর কারণ হিসেবে বিসিবির প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু জানান, ঘরোয়া ক্রিকেটে রানের ফোয়ারা ছোটানো অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান সবসময়ই ছিলেন জাতীয় দলের ভাবনায়।
সংবাদমাধ্যমকে গাজী আশরাফ হোসেন লিপু বলেন, ‘আমার মনে হয় (ওপেনারদের) যথেষ্ট পর্যাপ্ত সুযোগ দেয়া হয়েছে। যারা ওপেনিংয়ে ছিল তাদেরকে তাদের আউটের ধরণ দেখলেই বুঝবেন। বিজয় অবশ্যই অনেক ভালো ফর্মে আছে। তাকে দলে নেওয়ার ক্ষেত্রে কোন বাধা ছিল না। একটু দেরিতে হলেও সে তার সুযোগটা পেয়েছে।’
গত কয়েক বছর ধরে ঘরোয়া ক্রিকেটের যে কোনো টুর্নামেন্টে রান সংগ্রাহকদের তালিকায় ওপরের দিকেই থাকে এনামুলের নাম। সবশেষ এনসিএলে ১৩ ইনিংসে ১ সেঞ্চুরি ও ৬ ফিফটিতে তিনি করেছিলেন আসরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৭০০ রান। পরে বিপিএলে ১২ ইনিংসে ১ সেঞ্চুরি ও ২ ফিফটিতে ৩৯২ রান করেন এই টপ-অর্ডার ব্যাটসম্যান। একই ফর্ম ধরে রেখে এবার ডিপিএলে ১৪ ইনিংসে ৪টি করে সেঞ্চুরি ও ফিফটিতে ৭৯.৪৫ গড় ও ৯৭.৪৩ স্ট্রাইক রেটে করেন সর্বোচ্চ ৮৭৪ রান।
এমন পারফরম্যান্সের পর এনামুলের দলে ফেরা নিয়ে সংশয়ের জায়গা খুব একটা নেই। প্রধান নির্বাচক বলেন, ‘(এনামুল) বিজয় সবসময়ই আমাদের প্রক্রিয়ায় ছিল, ভাবনায় ছিল। কোনো ক্রিকেটারকে দলে ফেরানোর জন্য আগে ‘এ’ দলে খেলানোর প্রক্রিয়াটা অনুসরণ করছিলাম। সেই ধারায় গত বছর পাকিস্তানে ‘এ’ দলের সফরে বিজয় ছিল।’
এ’ দলের ওই সফরে অবশ্য ভালো করতে পারেননি এনামুল। বৃষ্টিবিঘ্নিত দুই ম্যাচের তিন ইনিংস মিলিয়ে মোটে ১৮ রান করেন তিনি। এক ইনিংসেও ছুঁতে পারেননি দুই অঙ্ক। তবে প্রকৃতির বাগড়ায় উইকেট-কন্ডিশন চ্যালেঞ্জিং থাকায় ওই সিরিজের ব্যর্থতা বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। বরং ছন্দে থাকা একজনকে দলে পাওয়ায় খুশি প্রধান নির্বাচক।
তিনি বলেন, ‘আমরা যাদের ওপর ভরসা রাখছিলাম, তাদেরকে বের করে নেওয়ার আগে যেন যথেষ্ট সময় পায় এবং খেলার পরই যেন বাদ দেওয়া হয়, সেই চেষ্টা করছিলাম। শুরুতে তাই এক টেস্টের দল দেওয়া হয়েছে। প্রথম টেস্টে (ওপেনাররা) ব্যর্থ হওয়ায় একটা সুযোগ তৈরি হয়েছে। এছাড়া ঘরোয়া ক্রিকেটের সব সংস্করণেই বিজয় ছন্দে আছে। আমরা তো এমনিতে ফর্মের সংকটে ভুগি। ফর্মে থাকা কাউকে সেভাবে পাই না। এবার কিছু ক্রিকেটার ব্যতিক্রম।