
খেলাধুলা: চলমান বিপিএলে একের পর এক আলোচনার জন্ম দিচ্ছেন ফরচুন বরিশালের অধিনায়ক তামিম ইকবাল। রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে ম্যাচে ইংলিশ ওপেনার অ্যালেক্স হেলসের ওপর মেজাজ হারানোর পর এবার তিনি মেজাজ হারান ঢাকা ক্যাপিটালসের হার্ডহিটার ব্যাটার সাব্বির রহমানের ওপর। বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) ঢাকার বিপক্ষে বরিশালের ম্যাচে এ ঘটনাটি ঘটে। ঢাকার দেয়া ১৪০ রানের সহজ লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে ব্যাট করছিলেন তামিম ইকবাল ও ডেভিড মালান। ইনিংসের নবম ওভারে ঘটে এই ঘটনা। ওভারের দ্বিতীয় বলটি ডিপ মিড উইকেটের দিকে ঠেলে রান নিতে গিয়েছিলেন তামিম। সাব্বির রহমান তখন বাউন্ডারি লাইনের কাছ থেকে বলটি সংগ্রহ করার সময় প্রথমবার বলটি না ধরে একটু সামনে ফেলে দেন এবং পরে তা তুলে বোলারের দিকে ছুঁড়ে দেন।
এই ঘটনায় নন-স্ট্রাইক প্রান্তে এসে তামিম সাব্বিরকে উদ্দেশ্য করে বলেন, বেশি লাগতে যেও না সাব্বির, বেশি লাগতে যেও না। ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, তামিম আরও কিছু বলছেন, যা পরিষ্কার শোনা যায়নি। এ সময় সাব্বির তামিমের দিকে এগিয়ে আসতে থাকেন। ঢাকার অধিনায়ক থিসারা পেরেরা এবং ফিল্ড আম্পায়ারদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ঘটনাটি নিয়ে তুমুল আলোচনা শুরু হয়েছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, সাব্বিরের ফিল্ডিং আচরণ ‘ফেইক ফিল্ডিং’ হিসেবে গণ্য করা যেতে পারে কিনা। ক্রিকেটের নিয়ম অনুযায়ী, যদি কোনো ফিল্ডার ইচ্ছাকৃতভাবে ব্যাটসম্যানকে বিভ্রান্ত করার জন্য বলকে মিস করে আবার কৌশলে থ্রো করেন, তবে এটি ফেইক ফিল্ডিং হিসেবে বিবেচিত হয়। সাব্বিরের ক্ষেত্রেও এমন কিছু হয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তামিম-সাব্বিরের এই বিতর্ক নিয়ে সমর্থকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেকেই তামিমের আবেগপ্রবণ আচরণের সমালোচনা করেছেন, আবার কেউ কেউ সাব্বিরের আচরণকে খেলার চেতনাবিরোধী বলে মন্তব্য করেছেন। ঘটনাটি নিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) কোনো তদন্ত করবে কিনা, সেটি এখনো নিশ্চিত নয়। এদিকে মাঠের এ বিতর্ক নিয়ে মুখ খুলেছেন ক্রিকেটার সাব্বির ও ঢাকা ক্যাপিটালস কোচ খালেদ মাহমুদ সুজন। একটি বেসরকারি টেলিভিশনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে সাব্বির বলেন, মাঠের মধ্যে যে ঘটনাই হোক, এটা মাঠের মধ্যেই শেষ হয়ে যায় আমাদের। তামিম ভাই আমার সিনিয়র বড় ভাই। রেসপেক্টেড বড় ভাই এবং লেজেন্ড ক্রিকেটার। এরকম ক্রিকেটার বাংলাদেশে আসবেও না, আমি জানি। ওনার হিট দ্য মোমেন্টে এটা হয়ে গেছে। আমি ওটা কিছু মনে করিনি। উনি আমার খুবই ক্লোজ বড় ভাই। উনার সঙ্গে আমার সম্পর্ক খুবই ভালো। আশা করছি, সম্পর্কটা চিরস্থায়ী থাকবে। ভবিষ্যতেও ভালো যাবে।
অন্যদিকে ঢাকা ক্যাপিটালস কোচ খালেদ মাহমুদ সুজন বলেন, সাব্বিরকে আমি দেখলাম হঠাৎ করে খেলা শেষ করে বের হয়ে চলে যেতে। আমি জানি না তামিম কেন সাব্বিরকে কিছু বলেছে বা সত্যিই বলছে কিনা। বা কি বলেছে এটা আমি জানি না। মাঠের মধ্যে আসলে অনেক কিছুই হয়। মাঠের জিনিসগুলো মাঠে থাকাই ভালো। কিন্তু তারপরও সিনিয়রদের রেসপন্সিবিলিটি থাকে। আবার জুনিয়রদেরও রেসপন্সিবিলিটি যে সিনিয়রদের সঙ্গে মাঠে সেরকম ব্যবহার করা। আমি বলি যে যখন আমরা মাঠের দড়ির ভেতরে যাব তখন আর সিনিয়র-জুনিয়র থাকবে না। তখন আমি প্রতিপক্ষ। আমি ফাইট করব, দলের জন্য খেলব। খেলা শেষে মাঠের বাইরে অবশ্যই বড়দের সম্মান ও ছোটদের স্নেহ অবশ্যই থাকা উচিত।
তিনি আরও বলেন, মাঠে ঢুকলে সিনিয়র-জুনিয়র বলে কোনো কথা নেই। কেননা তুমি খেলছ তোমার দলের জন্য, আমি খেলছি আমার দলের জন্য। হ্যাঁ যদি বেয়াদবিটা ওই অর্থে হয়, সেই বেয়াদবিটা আবার আমার মনে হয় না কোনো ক্রিকেটার করবে। তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান, মাশরাফি, মাহমুদউল্লাহ, মুশফিক এরা আমাদের সিনিয়র ক্রিকেটার। বা আরও যারা সিনিয়র ক্রিকেটার আছে। তবে আমার মনে হয় না এমন একটা হয়। যদি তামিম এমন কিছু বলে থাকে তাহলে নিশ্চয়ই কোনো কারণ ছিল। যদি আননেসেসারি কিছু বলে থাকে তাহলে সেটা কত সিরিয়াসলি বলেছে সেটাও জানি না। কিন্তু যদি সে বলে থাকে তাহলে অবশ্যই সে ঠিক করেনি। সে একজন লিজেন্ড ক্রিকেটার, তাকে দেখে মানুষ শিখবে, ইয়ংস্টাররা শিখবে।