জাতীয়: দেশ থেকে পালিয়ে দিল্লিতে আশ্রয় নেওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারত সরকারকে কড়া বার্তা দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
বাংলাদেশে প্রত্যর্পণ না করা পর্যন্ত শেখ হাসিনাকে ভারতে চুপ থাকতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। বৃহস্পতিবার ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদ সংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়াকে (পিটিআই) দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস এ মন্তব্য করেছেন।
গত রোববার ড. ইউনূস ঢাকায় তার সরকারি বাসভবনে এই সাক্ষাৎকার দেন। ড. ইউনূস বলেন, ‘ভারতে তার (শেখ হাসিনা) অবস্থান নিয়ে কেউ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছে না। কারণ তাকে বিচারের আওতায় আনতে আমরা তাকে ফেরত চাই। তিনি ভারতে আছেন। মাঝে মাঝে তিনি কথা বলছেন। এটাই সমস্য সৃষ্টি করছে। যদি তিনি চুপ থাকতেন, তাহলে আমরা তাকে ভুলে যেতাম। মানুষ তাকে ভুলে যেতো। তিনি তার নিজের জগতে থাকতেন। কিন্তু তিনি ভারতে বসে কথা বলছেন, নির্দেশনা দিচ্ছেন; এটা কেউই পছন্দ করছে না।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘সবাই এটা বুঝতে পারছে। আমরা বেশ দৃঢ়ভাবে বলেছি যে, তার (শেখ হাসিনা) চুপ থাকা উচিত। এটি আমাদের প্রতি একটি অবন্ধুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত; তাকে সেখানে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে এবং তিনি সেখান থেকে প্রচার চালাচ্ছেন। এমন নয় যে, তিনি স্বাভাবিকভাবে সেখানে গেছেন। গণঅভ্যুত্থান ও জনরোষের কারণে তিনি পালিয়ে গেছেন।’
ড. ইউনূস বলেন, ‘বাংলাদেশ তাকে (হাসিনা) ফেরত আনবে। কারণ এটাই জনগণের চাওয়া। হ্যাঁ, তাকে ফিরিয়ে আনতে হবে। তা না হলে বাংলাদেশের মানুষ শান্তিতে থাকবে না। তিনি যে ধরনের নৃশংসতা করেছেন, তাকে এখানে সবার সামনে বিচার করতে হবে।’
প্রসঙ্গত, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মূলত গত ১৩ আগস্ট হাসিনার দেওয়া বিবৃতির কথা বোঝাতে চেয়েছেন। সেই বিবৃতিতে বাংলাদেশের ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড’, হত্যা ও ভাঙচুরের সঙ্গে জড়িতদের তদন্ত, চিহ্নিত ও শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানান হাসিনা।
ভারত সরকারের উদ্দেশে ড ইউনূস বলেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে ভারতকে নিজেদের আখ্যান থেকে বেরিয়ে আসা। আখ্যানটি হলো-বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ বাকি সবাই ইসলামপন্থি এবং এই দেশকে তারা আফগানিস্তানে পরিণত করবে। আর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ নিরাপদ থাকবে। এই আখ্যানে ভারত বিমোহিত। ভারতকে এই আখ্যান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও তাদের আরেকটি প্রতিবেশী।’
বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘উভয় দেশকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে এবং এটা (দুই দেশের সম্পর্ক) বর্তমানে নিচের দিকে যাচ্ছে। আমাদের এই সম্পর্ক উন্নত করতে একসঙ্গে কাজ করতে হবে, যা এখন নিম্নপর্যায়ে রয়েছে।’
ভারতের সাথে দ্বিপাক্ষিক চুক্তির ভবিষ্যৎ সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে ড. ইউনূস বলেন, ‘ট্রানজিট এবং আদানি বিদ্যুৎ চুক্তির মতো কিছু চুক্তির পুনর্বিবেচনার বিষয়ে দাবি রয়েছে।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘সবাই বলছে এটা (চুক্তির পুনর্বিবেচনা) দরকার। আমরা দেখব (চুক্তির) কাগজে কী আছে এবং দ্বিতীয়ত, বাস্তবে আসলে কী ঘটছে। আমি এটা নির্দিষ্টভাবে উত্তর দিতে পারি না। যদি পর্যালোচনা করার প্রয়োজন হয়, তাহলে আমরা এটা সম্পর্কে প্রশ্ন উত্থাপন করবো’
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। তারপর থেকে তিনি সেখানে অবস্থান করছেন। প্রাথমিকভাবে তিনি অল্প সময়ের জন্য ভারতে থাকবেন বলে আশা করা হলেও এখন শোনা যাচ্ছে তার যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে আশ্রয় নেয়ার প্রচেষ্টা এখনো পর্যন্ত সফল হয়নি। ভারতে হাসিনার অব্যাহত উপস্থিতি অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে একটি শক্তিশালী সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে দিল্লির জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।
সূত্র : আমাদের সময়