
বাংলাদেশ বিমানের ম্যানচেস্টার থেকে সিলেটগামী ফ্লাইটটি বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে পৌঁছানোর কথা ছিল। তবে রমজানের মধ্যে নির্ধারিত সময়ের কয়েক ঘণ্টা আগে থেকেই হামজা চৌধুরীকে এক নজর দেখতে বিমানবন্দরে হাজির হন বাংলাদেশের ফুটবলপ্রেমীরা। পৌনে ১১টায় সিলেটে হামজার পা রাখার পর বিমানবন্দরটি ছিল এক ভিন্ন আবহে ভরা।
বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) হামজার জন্য ভিআইপি ব্যবস্থার আয়োজন করেছিল। সিলেট বিমানবন্দরে হামজাকে স্বাগত জানান বাংলাদেশ বিমানের স্টেশন ম্যানেজার শাকিল আহমেদ। বিমানবন্দরের কর্মীরা হামজা ও তার পরিবারের সঙ্গে ছবি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। ভিআইপি এরিয়ায় জমায়েতও ছিল চোখে পড়ার মতো। ভিআইপি গেটের বাইরে গণমাধ্যমকর্মীরা অপেক্ষা করছিলেন। বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষে বাফুফের এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে হামজাকে গণমাধ্যমের সামনে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়।
বাংলাদেশের প্রধান সব গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা সিলেট বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন, পাশাপাশি সামাজিক মিডিয়ার অনেক সদস্যও ছিলেন। এর ফলে হামজার মিডিয়া সেশন পরিচালনা করতে বাফুফে সদস্যদের বেশ কষ্ট করতে হয়। গতকাল ম্যাচ খেলে নয় ঘণ্টার বিমানযাত্রা শেষ করার পরও সাধারণ মানুষ ও গণমাধ্যমের এমন উন্মাদনায় হামজা অভিভূত হন। প্রথম প্রতিক্রিয়াতেই তিনি বলেন, “এমিজিং, এমিজিং। দীর্ঘ ১১ বছর পর এখানে এসে আমি খুব এক্সাইটেড।”
হামজার প্রথম মিশন ২৫ মার্চ ভারতের বিপক্ষে এশিয়ান কাপ বাছাই ম্যাচে। এই ম্যাচটিকে তিনি ডার্বি হিসেবে অভিহিত করে বলেন, “ইনশাআল্লাহ, আমরা ডার্বি জেতার আশা রাখি এবং জিতে আমরা উন্নতি করতে চাই।”
হামজা ইংল্যান্ডে জন্ম ও বেড়ে উঠলেও তার বাবা-মা বাংলাদেশি। ইংল্যান্ডে বাঙালি পরিবেশে বেড়ে উঠেছেন তিনি এবং সিলেটি ভাষায় কথাও বলতে পারেন। বাংলাদেশের হয়ে খেলতে যাওয়া ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের এই ফুটবলারকে বাংলায় প্রত্যাশা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে প্রথমে তিনি বুঝতে পারেননি, “আমি বুঝছি না, বুঝছি না।” তবে পরে পুরোপুরি বাংলায় প্রশ্ন করার পর হামজা সিলেটি ভাষায় সুন্দরভাবে উত্তর দেন, “ইনশাআল্লাহ, আমরা উইন করমু। আমরার বিগ ড্রিম আছে, আমি কোচ হ্যাভিয়েরের সঙ্গে মাতসি (কথা বলেছি)। ইনশাআল্লাহ, আমরা উইন করে প্রোগ্রেস করতে পারমু।”
বাফুফে কর্তারা গণমাধ্যম সামলাতে অক্ষম হচ্ছিলেন। দ্রুত মিডিয়া সেশন শেষ করে হামজাকে ভেতরে নিয়ে যেতে চাইলেন তারা। শেষ প্রশ্নটি ছিল, “বাংলাদেশে এসে এত উন্মাদনা ও ভালোবাসা কেমন লাগছে?” এর উত্তরে হামজা বলেন, “আমার হৃদয় পূর্ণ।” এই মন্তব্যের পর বাফুফে কর্তারা হামজাকে ভেতরে নিয়ে যান।
বাফুফে প্রতিনিধি দলের সদস্য, সাবেক জাতীয় ফুটবলার গোলাম গাউস বলেন, “বাইরের মতো ভেতরে থাকা সবাইও হামজাকে কাছে পেয়ে উচ্ছ্বসিত। গাড়িতে হামজা ও তার পরিবারের লাগেজ উঠানো হচ্ছে। কিছুক্ষণের মধ্যে হামজা সপরিবারে হবিগঞ্জের উদ্দেশে রওনা দেবেন।”