প্রচ্ছদ সারাদেশ ঘরে নেই বাজার, মসজিদ থেকে পাওয়া খিচুড়ি খেয়েই দিন পার

ঘরে নেই বাজার, মসজিদ থেকে পাওয়া খিচুড়ি খেয়েই দিন পার

সারাদেশ: ঘরে রান্নার জন্য বাজার নেই। নেই নগদ টাকাও। তাই রান্না হয়নি। মসজিদ থেকে পাওয়া খিচুড়ি খেয়েই দিন পার করেছেন শিশু জিহাদসহ তার বৃদ্ধ অসুস্থ বাবা তাহাজ্জেল হোসেন। মা হাফিজা খাতুনও দীর্ঘদিন অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী। তিনি স্যালাইন পানি খেয়েই দিন পার করছেন।

শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যার পর মোবাইলে খোঁজখবর নিতে গেলে কাঁদতে কাঁদতে এসব কথা জানান বৃদ্ধ তাহাজ্জেল হোসেন।

এর আগে বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায় যাত্রীবেশে শিশু জিহাদের ভ্যানটি ছিনিয়ে নেয় এক দুষ্কৃতকারী। ঋণের টাকায় কেনা একমাত্র উপার্জনের সম্বল ব্যাটারিচালিত ভ্যানটি হারিয়ে পরিবারটি দিশেহারা হয়ে পড়েছে। বাবা অ্যাজমা রোগী হওয়ায় ১২ বছর বয়সী শিশু জিহাদের উপার্জনেই চলত পরিবারটি। একদিন ভ্যান না চালালে খাবার জোটে না তাদের। ভ্যান ছিনতাইয়ের পর থেকে বাড়িতে রান্নাবান্না হয়নি বলে জানা গেছে।

শুক্রবার সন্ধ্যার পর বৃদ্ধ তাহাজ্জেল মিয়া বলেন, ঘরে রান্নার জন্য কিছুই নেই আমার। নেই কোনো নগদ টাকাও। আজ (শুক্রবার) বাড়িতে কোনো রান্না হয়নি। জুমার নামাজের পর মসজিদ থেকে এক থালা খিচুড়ি দিয়েছিল। সেটা বাবা-ছেলে খেয়েছি। রাতে কি খাব জানি না। এখন পর্যন্ত আমাদের কেউ কোনো খোঁজও নেয়নি।

এর আগে বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) বিকেলে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার নবগঠিত মাখালডাঙ্গা ইউনিয়নের দীননাথপুর গ্রামের পোস্ট অফিস পাড়ায় শিশু জিহাদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, মা হাফিজা খাতুন অসুস্থ হয়ে বিছানায় শোয়া। কিডনি, ডায়াবেটিস, হার্টের রোগে ভুগছেন দীর্ঘদিন যাবত। বাবা তাহাজ্জেল মিয়ারও বয়স হয়েছে। যে কারণে আর ভ্যান চালাতে পারেন না তিনি।

বৃহস্পতিবার বিকেলে বৃদ্ধ তাহাজ্জেল মিয়া বলেছিলেন, আমি অ্যাজমা রোগী। ভ্যান চালাতে কষ্ট হয়। তাই একটি এনজিও থেকে আট মাস আগে ৫০ হাজার টাকা লোন তুলে জিহাদকে ভ্যান কিনে দিয়েছিলাম। এরপর থেকেই ভ্যান চালিয়ে যা উপার্জন হতো তা দিয়ে টেনেটুনে চলত সংসার। আমার স্ত্রী দীর্ঘদিন যাবত অসুস্থ হয়ে বিছানায়। কিডনি, ডায়াবেটিস, হার্টের রোগে ভুগছেন দীর্ঘদিন যাবত। কিছুই খেতে পারেন না। স্যালাইন পানি পান করেই কাটিয়ে দিচ্ছে। তার চিকিৎসার জন্য ওষুধ লাগে। ঘরে এখন চাল কেনারও টাকা নেই বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন এই বৃদ্ধ।

তিনি আরও বলেন, আমার ছেলে স্থানীয় বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছে। এরপর সে আর পড়েনি। এখন আমার এই ছেলেটাই সম্বল। সে আমাদের দেখাশোনা করে। যাত্রীবেশে ছেলের কাছ থেকে ভ্যান নিয়ে গেছে। এনজিও থেকে লোন তুলে ভ্যান কিনে দিয়েছিলাম। ঘরে চাল কেনার টাকাই নেই, লোনের টাকা পরিশোধ করব কীভাবে।

প্রসঙ্গত, বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) চুয়াডাঙ্গার সদর হাসপাতাল থেকে একজন যাত্রী উঠে শিশু জিহাদকে শহরের বড়বাজারে নিয়ে যেতে বলেন। সেখান থেকে দরদাম করে আলমডাঙ্গাতে নিয়ে যায়। এরপর আলমডাঙ্গা স্টেশন সংলগ্ন স্থানে গেলে শিশু জিহাদকে পাশের দোকান থেকে একটি বস্তা নিয়ে আসতে বলেন ওই যাত্রী। ফিরে এসে জিহাদ দেখে তার ভ্যান নেই।