প্রচ্ছদ খেলাধুলা এক দিনের ব্যবধানেই উল্টো চিত্র দেখাচ্ছে বাংলাদেশ

এক দিনের ব্যবধানেই উল্টো চিত্র দেখাচ্ছে বাংলাদেশ

বৃষ্টি বাধা হয়ে এসেছে। আলো কমে আসায় খেলা অনেক আগেভাগেই শেষ হয়ে গেছে। এমন দিনে আলো যা, সব কেড়ে নিয়েছেন মেহেদি হাসান মিরাজ।

শেষ পর্যন্ত পুরো দিনে খেলা হতে পেরেছে মাত্র ৫৭.৫ ওভার। ম্যাচে বাংলাদেশের অবস্থান প্রায় ১৮০ ডিগ্রি ঘুরিয়ে দেওয়া ৫৮টি ওভারই কি? কাল দ্বিতীয় দিন শেষেও শঙ্কা ছিল, বাংলাদেশ হয়তো ইনিংস ব্যবধানেও হেরে যেতে পারে। আজ সকালে প্রথম আধা ঘণ্টার পর তো এই ম্যাচ তৃতীয় দিন পেরিয়ে চতুর্থ দিন দেখে কি না, তা নিয়েই সংশয় জেগেছিল।

অথচ তৃতীয় দিনের শেষে চিত্রটা কী? বাংলাদেশ এখন হিসেব কষছে, আর কত রান করতে পারলে দক্ষিণ আফ্রিকাকে মিরপুরের চতুর্থ দিনের (হয়তো পঞ্চম দিনেরও) পিচে একটা অনতিক্রম্য লক্ষ্য দেওয়া যাবে! ৭ উইকেটে ২৮৩ রান নিয়ে দিন শেষ করেছে বাংলাদেশ, লিড ৮১ রানের।

বাংলাদেশের এক দিনের মধ্যেই পরিস্থিতির এমন বদলে যেতে দেখার রূপকার? মিরাজ! দিন শেষে ৮৭ রানে অপরাজিত তিনি। অবশ্য শুধু মিরাজের কথা বললে ৫৮ রান করা জাকের আলী অনিকের অবদানকে খাটো করে দেখানো হয়ে যাবে।

আজ দিনের প্রথম আধা ঘণ্টায় ধ্বংসস্তুপের মুখে দাঁড়ানো বাংলাদেশকে যে উদ্ধার করেছে সপ্তম উইকেটে মিরাজ-জাকেরের ১৩৮ রানের জুটি! রাবাদার তিন বলের মধ্যে আগের দিনের দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান জয় আর মুশফিক ফিরে যান, এর ওভার চারেকের মধ্যে আউট হয়ে গেলেন লিটন দাসও। ইনিংস হারের শঙ্কা তখন বাংলাদেশকে চোখ রাঙাচ্ছে।

আগের দক্ষিণ আফ্রিকার ভেরেইনা-মুল্ডারের জুটির সঙ্গে কী দারুণ মিল থেকে গেল মিরাজ আর জাকেরের এই জুটির। সেটি শুধু দুটিই সপ্তম উইকেটে কিংবা দুটিই সেঞ্চুরি জুটি বলে নয়, জুটির ধরনেও। এই পিচে আগ্রাসী ব্যাটিংই বরং সেরা অস্ত্র বলে আগের দিন প্রমাণ করে দিয়েছিলেন ভেরেইনা আর মুল্ডার, মিরাজ আর জাকেরও আজ আক্রমণকেই অস্ত্র মেনেছেন।

একেবারে তেড়েফুঁড়ে আক্রমণ নয়, তবে দেখেশুনে হিসেব কষে আক্রমণ। তাতে ১১২ রানের সময়ে ষষ্ঠ ব্যাটসম্যান লিটনকে হারানো বাংলাদেশের রান লাঞ্চ ব্রেকেই ২০০ ছুঁয়ে ফেলল, দক্ষিণ আফ্রিকা তখন ১ রানে এগিয়ে ছিল। মধ্যাহ্নবিরতির পর জাকের বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি, ফিফটি করার কিছুক্ষণ পরই এলবিডাব্লিউ হয়ে গেছেন কেশব মহারাজের বলে। এর পরের ওভারেই নাঈম হাসানও আউটের শঙ্কার মুখে পড়েছিলেন, তবে রিভিউতে বেঁচে যান।

শেষ পর্যন্ত সেই নাঈমকে নিয়েই চলল মিরাজের লড়াই। বৃষ্টি এসে খেলা থামিয়ে দেওয়ার পর আলোকস্বল্পতায় তা আর শুরুই করা যায়নি, তবে তার আগে নাঈমের সঙ্গে জুটিতেও ৩৩ রান এনে দিয়েছেন মিরাজ। নাঈম দিন শেষে অপরাজিত ১৬ রানে।

নাঈম আর জাকেরের সঙ্গে দারুণ দুই জুটিতে বাংলাদেশকে এখন আগামীকাল নিয়ে বড় আশা দেখানো মিরাজ ফিফটি পেয়ে গিয়েছিলেন লাঞ্চ ব্রেকের আগেই। তবে তাঁর ইনিংস কতটা হিসেবী কিন্তু আগ্রাসী ছিল, তার প্রমাণ – ফিফটি পেতে মিরাজের বল লেগেছিল ৯৪টি, কিন্তু তার মধ্যেই চার মেরেছিলেন ৭টি, ছক্কা ১টি। ফিফটির পর চার আর মেরেছেন মাত্র দুটি।

মিরপুরে চতুর্থ দিনের পিচে অন্তত ১৫০ রানের লক্ষ্য তো দিতেই চাইবে বাংলাদেশ। মিরাজ কাল কতক্ষণ টিকে থাকেন, তারওপরই নির্ভর করবে বাংলাদেশ সেটা পারবে কি না।